যখন চক্রান্ত বা ষড়যন্ত্রে বিশ্বাসের প্রশ্ন আছে, তখন এই ষড়যন্ত্রকারীর তালিকায় আমেরিকানরা কোন অংশে দ্বিতীয় হওয়ার মতো না। যারা এই স্টেটমেন্ট এ বিশ্বাস করে তাদের মতে ষড়যন্ত্রকারীরাই আমেরিকাকে ২য় বিশ্বযুদ্ধের দিকে ঠেলে দিয়েছিল যার অজুহাত ছিলো জন. এফ কেনেডির বিশ্বাসঘাতকতামূলক গুপ্ত হত্যা এবং ইচ্ছাকৃতভাবে এইচআইভি ছড়ানো। এবং ষড়যন্ত্র ধাপের সর্বচ্চে অবস্থান করে আছে সেই সিক্রেট সোসাইটি এবং ধারণা করা হয় তারাই পুরো বিশ্ব নিয়ন্ত্রণ করে। এ বিষয়টা নিশ্চিত যে কিছু মানুষ যে কোন প্রেসিডেন্ট, রাজা কিংবা একনায়কের চাইতেও অধিক ক্ষমতা রাখেন। কারা এই সুক্ষ ষড়যন্ত্রকারী এবং কেনইবা তাদের সর্বক্ষমতাধর ধারণা করা হয়?
Secret Societies ( World Behind The scene)
সুইজ্যারল্যাণ্ডের সশস্ত্র বাহিনী পাহারা দেয় বিশ্বের ক্ষমতাবান এলিটদের, ধোয়ায় আচ্ছন্ন একটি কক্ষে বসে ক্ষমতাবান গুপ্তচরগন বিশ্ব অর্থনীতি নিপূণভাবে পরিচালনা করে---- ধারনা অনুযায়ী এগুলো কিছু মার্কিন সিক্রেট সোসাইটির কার্যকলাপ। যেমন- Bilderberg, Skull and Bones এবং trilateral commission। অনেক পরিচিত এবং বিখ্যাত কিছু মুখ এই সিক্রেট সোসাইটির সাথে যুক্ত, হেনরি ক্যাসিঞ্জার (Henry Kissinger ), ডেভিড রকারফিলার (David Rockefeller ) বিল ক্লিন্টন (Bill Clinton )....সহ আরো অনেকে। তবে সোজাসুজিভাবে ধরে নেওয়া যায় একশ জন উচ্চপদস্থ এবং অধিক ক্ষমতাসম্পন্ন ব্যক্তিবর্গ আছেন যারা এই সিক্রেট সোসাইটির প্রাণশক্তি। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের নিকটতম ইতিহাস থেকে কিছু সিক্রেট সোসাইটির অস্তিত্ব নিশ্চিত হওয়া যায়। যেমন- Freemason এবং ArtFellas। তাদের অফিসিয়াল সঙ্কেত বা সিম্বলগুলো অসংখ্য চটুলতা এবং ফটকাবাজিতার প্রমাণ বহণ করে। বর্তমানে অল্পসংখ্যক কিন্তু ক্রমবর্ধমান ষড়যন্ত্র তাত্ত্বিকদের (conspiracy theorist) মতে এই রহস্যপূর্ণ প্রতিষ্ঠানগুলোই অশুভ চক্রের মূল হোতা। এটা সত্য যে প্রতিটি দৃশ্যের পিছনে এবং প্রতিটি স্পষ্টতই সম্পর্কহীন প্রতিষ্ঠানগুলোর পেছনে একটি গোপন হাত কাজ করছে। এবং তারা অগ্রসর হচ্ছে অদৃশ্য একটি এজেন্ডা নিয়ে কিছু বিষয় সরাসরি নিয়ন্ত্রণ করার জন্য। যেমন- বিশ্ব শাষণব্যবস্থা, বিশ্বব্যাংক, কারেন্সি, বিশ্ব অর্থনীতি এবং ক্ষুদ্র জনগষ্ঠী। এসব সিদ্ধান্ত কখনো প্রকাশ্যে হয় না কারণ আমরা যদি প্রকৃত এজেন্ডা বা আলোচ্যসূচি জেনে যাই, তা কখনেই হয়তো মেনে নেওয়া সম্ভব হবে না।
যদি আমরা ইতিহাস দেখি তাহলো আমরা দেখবো ষড়যন্ত্রের একটা লম্বা লিস্ট যা কখনো ষড়যন্ত্র চলাকালে ধরা পড়ে না। বেশিরভাগ ক্ষেত্রে লক্ষ করা যায় ষড়যন্ত্র বাস্তবায়নের প্রায় কয়েক দশক পরে এই ষড়যন্ত্রের অংশবিশেষ বিশ্ববাসী জানতে পারে। এমনকি গ্রীক মিথলজির সেই ডেল্ফী মন্দিরে (The Temple of Delphi) কোন গডের অস্থিত্ব বাস্তবে ছিলো না, এটাও ছিলো একটা ষড়যন্ত্রের অংশ বলে প্রতিয়মান হয়। মুসলীম বিশ্বও এই ষড়যন্ত্রের উর্ধে নয়।
নীল আর্মস্ট্রং এর ইসলাম ধর্ম গ্রহণ এবং কয়েক দশক পর যা ভুয়া প্রমাণিত হয়- এই বিতর্কের মধ্যেও ছিলো সুক্ষ ষড়যন্ত্র যা এখন অনেকটাই স্পষ্ট।
নীল আর্মস্ট্রং চাঁদে বসে কিছু শব্দ শুনেছিলেন, যেগুলোকে তিনি তখন বুঝতে পারেন নি কিন্তু পৃথিবীতে ফিরে তিনি সেই শব্দগুলোর সাথে আযানের শব্দের সাথে মিল পান। সুতরাং চাদ থেকে ফিরে এসে তিনি ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করেন। অথবা নীল আর্মস্ট্রং চাঁদে গিয়ে দেখতে পান চাঁদের বুকে একটি বড় রেখা যা কোনআনে বর্ণিত হযরত মুহাম্মদ (স) এর ইশারায় চাঁদের দিখণ্ডিত হয়ে যাওয়ার প্রমাণ বহন করে। এগুলাই মোটামুটি নীল আর্মস্ট্রং নিয়ে মুসলীম সমাজে প্রচলিত গালগপ্প। নীল আর্মস্ট্রং কি সত্যিই ইসলাম ধর্মগ্রহণ করেছিলেন? না, বছর খানেক আগে তিনি নিজেই মিডিয়ার সামনে বিষয়টি স্পষ্ট করেন। নীল আর্মস্ট্রংকে নিয়ে যখন এ বিতর্ক তুঙ্গে তখন তিনি নিজে একেবারেই লোকচক্ষুর আড়ালে থাকতেন। কিন্তু কেন? আমরা যদি উনিশ শতকের মাঝামাঝির বিশ্ব রাজনৈতিক পরিস্থিতি বিবেচনা করি তাহলে সহজেই বিষয়টা অনুমান করা যায় যে নীল আর্মস্ট্রং নাটকে কোন আমেরিকান সিক্রেট সোসাইটির ইন্ধন রয়েছে।
বিশ্বে তখন সমাজতন্ত্রের জয় জয়কার চলছিল এবং ভেঙে পড়ছিলো পুঁজিবাদ তথা ধনতন্ত্র রক্ষার সর্বৎকৃষ্ট হাতিয়ার ধর্ম। এখন পুঁজিবাদ বা ধণীকশ্রেণী রক্ষার স্বার্থে অবশ্যই ধর্মগুলোকে আগে রক্ষা করতে হবে। করণ এই ধর্মীয় সিম্পেথিকে কাজে লাগিয়ে বিশ্বের একটি বিরাট জনগোষ্ঠিকে বিভিন্ন ইস্যুতে ব্যাস্তরাখা সম্ভব হবে এবং এর অন্তরালে একের পর এক নীলনকশা বাস্তবায়ন করে যাবে টিকে থাকবে ধণীকশ্রেণী। যেমন- ইরাকের তেলাবিব, ফিলিস্তিনের বায়তুল আকসা, ভারতের কাশ্মির, আফগানিস্থানের তালেবান, পাকিস্তানের শিয়া-সুন্নি বিরোধ...এসব জিয়ে রেখে হুজুগে, ধর্মান্ধ এবং তুলনামূলকভাবে অশিক্ষিত অর্থশিক্ষিত দেশগুলোকে সদাব্যস্ত রাখা হয়। এবং এরই অন্তরালে একের পর এক আত্নঘাতি চুক্তি-স্বাক্ষর এবং নীলনকশা বাস্তবায়ন করা হয় যা থেকে যায় লোকচক্ষুর অন্তরালে।
ঊনিশ শতকের শুরু থেকে বিজ্ঞানের নব নব আবিস্কার এবং এর সাথে সমাজতন্ত্রের অপ্রতিরোদ্ধ উল্থান মানুষের মন থেকে ধর্মের মূলোতপাটনকে যখন তরান্বিত করছিল তখন নীল আর্মস্ট্রং-এর্ ইসলাম গ্রহণ প্রমান করেছে যে ধর্ম সত্য, ঈশ্বর আছে, আল্লাহ আছে।
আর্মস্ট্রং-এর মত একজন বিজ্ঞ বিজ্ঞানী কর্তৃক ঈশ্বর/আল্লাহর এই অস্তিত্ব প্রমাণ মানুষের মনকে ধর্ম নিয়ে নতুন করে ভাবতে শিখিয়েছে, বিশেষ করে অশিক্ষিত- অর্ধশিক্ষিত দেশগুলোয় এর প্রভাব ছিল অত্যন্ত বেশী। এর দ্বারা আমেরিকা ইসলামী দেশগুলোতে সমাজতন্ত্রের প্রসার রোধ করতে সক্ষম হয়েছে। অনেক ইসলামী দেশই তখন সমাজতন্ত্রের দিকে ঝুকে যাচ্ছিল। যেহেতু পৃথিবীর প্রায় সকল মানুষই অলৌকিকতার দ্বারা প্রভাবিত হয় এবং ইসলামে এর প্রভাব খুব বেশী, তাই আমেরিকা তথা ধনতন্ত্রের আর্মস্ট্রংকে ব্যবহার অযৌক্তিক নয়। এবং এটুকু বলা যায় আর্মস্ট্রং বিতর্কে তখন শুধু ইসলাম নয়, অন্য ধর্মের অনুসারীরাও প্রভাবিত হয়েছিল। সমাজতন্ত্রকে ঠেকানোর জন্য এর চেয়ে মোক্ষম হাতিয়ার তখনকার আমেরিকার হাতে দ্বিতীয়টি আর ছিল না। (এই অংশটা সন্যাসীর ব্লগ থেকে নেওয়া)
এখন বিশ্বে সমাজতন্ত্র অনেকটা কোনঠাসা অবস্থায় আছে। বিশ্ব এখন পুঁজিবাদের নিরাপদ এবং নির্লজ্জ বালাৎকারভূমি। তাই এতবছর পর এখন নীল আর্মস্ট্রং মিডিয়ায় তাকে নিয়ে বিতর্কের বিষয়টি বানোয়াড় বলে উড়িয়ে দিচ্ছেন এমনকি প্রথম চাঁদে যাওয়ার বিষয়টিও বিতর্কের মুখে পড়েছে। সিক্রেট সোসাইটি আর ষড়যন্ত্রকারী যাই বলি, একটা বিষয় পরিষ্কার তা হলে এদের উদ্দেশ্য একটাই- পুঁজিবাদ/ ধনতন্ত্রের ভীত মজবুত করা।
যাই হোক, মূল আলোচনা থেকে অনেক দূরে সরে গেছি। সিক্রেট সোসাইটি নিয়ে বিভিন্ন গবেষনাধর্মী লেখা এবং ডকুমেন্টারীর উপর ভিত্তি করে পর্বগুলো লিখবো বলে মনস্থির করলাম।
(চলবে)
সংযুক্তি:
Secret Societies/ New World Order by Milton William Cooper
Rockefeller Admitted Elite Goal Of Microchipped Population
Assassination of John F. Kennedy
How Neil Armstrong "became" a Muslim
Official View
Neil Armstrong (Conversion to Islam)
সর্বশেষ এডিট : ১১ ই সেপ্টেম্বর, ২০১১ রাত ১:৪৪